সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বামন গ্রহ ( টেল অব ফাইভ ডোয়ার্ফ প্লানেট)

 বামন গ্রহ

- মাহতাব মাহদী 


সাল ২০০৬, ২৪ আগস্ট।


 চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ – এ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) – এর অধিবেশন বসেছে। সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছেন। অধিবেশনে বোমা ফাটাল IAU! সৌরজতের ৯ম গ্রহ প্লুটোকে আর গ্রহ না বলে বামন গ্রহ বলা হলো! সাথে তারা আরো দুটো বামন গ্রহের কথা জানাল। জেনা (এখন এরিস) আর সেরেস! 


ক্লাইড টমবাউ বেঁচে থাকলে খুব কষ্ট পেতেন। কারণ ১৯৩০ সালে তাঁর আবিষ্কার করা প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো ২০০৬ সালে!


বিজ্ঞান মহলে একটা উত্তেজনা দেখা গেল। কারণ এর আগে কখনোই গ্রহের সাথে বামন টার্মটা ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র বামন নক্ষত্র ছিল। ফলে এটা একটা নতুন আবিষ্কার। তো বিজ্ঞানীদের অনেক প্রশ্ন ছিল। সবার প্রথমে যে প্রশ্নটা ওঠে সেটা হচ্ছে- 

  

বামন গ্রহটা কী আসলে?

“বামন” (dwarf) কথাটির আভিধানিক অর্থ ছোটো আকার বা খর্বাকৃতি। সুতরাং, বামন গ্রহ বলতে বোঝায় ছোটো আকারের বা খর্বাকৃতির গ্রহ। এই সংজ্ঞাটি বর্তমানে কেবল সৌরজগতের জন্যই প্রযোজ্য। প্লুটো গ্রহটিকে নিয়ে বিতর্ক ও উঠার পর উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বামন গ্রহের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করে প্লুটোকেও বামন গ্রহের তালিকায় স্থান দেয়। এতে করে এখন পর্যন্ত বামন গ্রহের সংখ্যা হলো পাঁচটা। এরা হলো সেরেস, এরিস, হাউমেয়া,মেকমেক ও প্লুটো।



আচ্ছা, বুঝলাম। তো পার্থক্য কী গ্রহের সাথে? 


একটি বামন গ্রহকে তার নিকটতম  প্রতিবেশেঅবস্থিত অন্য কোনো জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে অপসারণ করতে হয় না। গ্রহের সাথে এটিই কেবল তার পার্থক্য। বর্তমানে পাচটি বামন গ্রহ পাওয়া গেছে যাদের নাম পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। আরও যে বস্তুগুলো বামন গ্রহের মর্যাদা পেতে পারে তারা হলো: ৯০৩৭৭ সেডনা, ৯০৪৮২ অরকাস এবং ৫০০০০ কুয়াওয়ার। ১৯৩০ সালে আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্লুটো সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত হতো। কিন্তু অধুনা সৌরজগতে প্লুটোর মতো অনেক বস্তু আবিষ্কৃত হচ্ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এরিস যা প্লুটোর চেয়ে আকারে সামান্য বড়ো।



আচ্ছা, তো আকাশে এই বামন গ্রহকে কীভাবে চিনব? এর বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? 


IAU – এর সভায় বামন গ্রহের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, সেই মহাজাগতিক বস্তুকে বামন গ্রহ বলা হবে ———

 ১. যার যথেষ্ট পরিমাণে ভর থাকবে, যাতে বস্তুটির মহা মহাকর্ষ বল সেটিকে একটি গোলকের আকৃতি দেবে, অর্থাৎ বস্তুটিকে গোলাকার হতে হবে।

 ২. যেটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে। 

 ৩. যেটি নিজের কক্ষপথের আশেপাশের বস্তুকে সরিয়ে দিতে পারবে না।

 ৪. এবং যেটি উপগ্রহও নয়। 

তার মানে আকাশে যদি এমন কোনো জ্যোতিষ্ক দেখা যায় যার মাঝে এই ৪ টা গুণ আছে, তবে তাদেরকে বামন গ্রহ বলা যেতে পারে। 

তো এখন আসা যাক বামন গ্রহগুলোর পরিচয়েঃ

সবার প্রথমে স্টেজে আসছেন মিস্টার অভাগা   

দ্য প্লুটো :

বামন গ্রহ সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যের ৩নং সূত্রটিই আমাদের এতদিনের চেনাজানা সৌরজগতের নবম গ্রহ প্লুটোকে গ্রহের মর্যাদা থেকে নামিয়ে বামন গ্রহে পরিণত করেছে।  বাকি ৮ টি গ্রহের মতো প্রায় সব বৈশিষ্ট্য থাকলেও প্লুটো তার কক্ষপথের আশেপাশের বস্তুসমূহকে সরিয়ে দিতে পারেনি।  প্রকৃতপক্ষে নেপচুনের পর সৌরজগতের প্রায় শেষ প্রান্তে  যে কুইপার বেল্ট অংশ আছে, সেখানে ভেসে থাকা কোটি কোটি মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে প্লুটো অন্যতম। তাই প্লুটোর কক্ষপথ এবং কক্ষতলও অন্যান্য গ্রহের থেকে আলাদা। প্লুটোকে সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম বামন গ্রহের আখ্যা দেওয়া হয়েছে ২০০৬ সালে।  মিথেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইডসমৃদ্ধ প্লুটো মাত্র ৬০০০ কি.মি. ব্যাসবিশিষ্ট এবং প্লুটো থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৫৯২.৪১ কোটি কি.মি. .। একবার পূর্ণ আবর্তনে প্লুটো সময় নেয় ৬ দিন ১২ ঘণ্টা এবং সূর্যের চারদিকে একবার পূর্ণ পরিক্রমণে সময় লাগে ২৪৮ বছর। প্লুটোর পৃষ্ঠদেশের 

গড় তাপমাত্রা – ২৩০° সেন্টিগ্রেড।

এরপর আসছেন বড়ো ভাই এরিস :

এটা সবচেয়ে বড়ো ডোয়ার্ফ প্ল্যানেট। সালাম দেন। এরিস হলো নেপচুনের পর কুইপার বেল্ট অংশে ভেসে থাকা একটি গোলাকার মহাজাগতিক বস্তু। 

সূর্য থেকে প্রায় ৬৮ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থানকারী এরিস হলো বৃহত্তম বামন গ্রহ।  বহিঃস্থ বামন গ্রহের অন্তর্গত এরিস ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত হয়। 

ছোটো ভাই খ্যাত সেরেস :

মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে অবস্থিত সেরেস বামন গ্রহটি হলো সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহাণু।  ইতালির জ্যোতির্বিদ জুসেপ্পি পিয়াজ্জি ১৮০১ সালের ১ জানুয়ারি এটি আবিষ্কার করেন।  গ্রহাণুটি প্রায় ১০০ কি.মি. নিরক্ষীয় ব্যাস বিশিষ্ট এবং সূর্য থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪১.৩৯ কোটি কি.মি.।  সেরেস একবার পূর্ণ আবর্তনে ৯ ঘণ্টা ৪ মিনিট এবং সূর্য পরিক্রমণে ৪ বছর ২২১ দিন সময় নেয়। 

 

স্পিড বস হাউমেয়াঃ

 

 

স্পিড এর মূল কথা! যত দূরেই হোক, আগে দৌড়ায়! হাউমেয়া সবচেয়ে দূরের গ্রহ, নেপচুনেরও বাইরে। ২০০৪ সালে জ্যোতির্বিদ মাইক ব্রাউনের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধানী দল হাউমেয়াকে খুঁজে বের করে। তবে এটি বামন গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর ভর প্লুটোর তিন ভাগের এক ভাগ ও পৃথিবীর ১৪০০ ভাগের এক ভাগ। সূর্যকে ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ২৮৪ বছর। এখন পর্যন্ত এর দুটো উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। এ বামন গ্রহটিতে এক দিন হয় মাত্র চার ঘণ্টায় । কারণ হলো দ্রুত আবর্তন। ১০০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি চওড়া সৌরজগতের অন্য যে কোনো বস্তুর চেয়ে এটি দ্রুত ঘোরে।

 

 

বোন মেকমেক: 

এই বামন গ্রহটার সৌরজগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। গ্রহটার অবস্থান এরিসের সাথেই। ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত হয়েছে এই গ্রহ। এরিস ও মেকমেক এই দুইটা গ্রহকে দেখেই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন গ্রহের সংজ্ঞা পরিবর্তন করতে ও বামন গ্রহের থিওরি আনতে সক্ষম হয়। এই গ্রহটা হাউমেয়ার মতো ফাস্ট না, তবুও এখানে দিন হয় সাড়ে ২২ ঘণ্টায়। ধারণা করা হয়, এর পৃষ্ঠ বরফ আর পাথরের তৈরি। 

 

 

তো, মোটামুটি এই পাঁচটাপাঁচটাই বামন গ্রহ। আরো বেশ কিছু গ্রহ বামন গ্রহের মতো হলেও সব বৈশিষ্ট্য না থাকার জন্য তাদের আর বামন গ্রহের অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে প্লুটোও তার গ্রহের মর্যাদা ফিরে পেতেও পারে।

 

সোর্সঃ 

1.https://en.wikipedia.org/wiki/Dwarf_planet

2.https://www.jpl.nasa.gov/infographics/infographic.view.php?id=11268

3.http://banglaeducare.com/বামনগ্রহ-তাদের-নাম-কয়টি-ক/


মন্তব্যসমূহ

  1. Good writing. But what about Sedna?It's also a Drawf planet anyway.And Pluto got her 'planet' status back in 2019, didn't it?

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. Thanks for your comment. You got a very important point.

      First of all, 90377 Sedna along with some other planetoid are not in the list of dwarf planet because they didn't fulfill all of the requirements to be 6th dwarf planet. Sedna has 3 requirements but it lacks our 4th and most important requirements . So it is like dwarf planet but it is not dwarf planet.

      Next one seems pretty interesting, Pluto is a planet now? YES or NO?

      => Well it's no actually . In 2019, many astronomers raised this conversation but they failed to prove Pluto a dwarf planet again... until they manage to prove so, lets turn down the topic.

      Hope you understand. Thanks for your comment. Have a good day.

      মুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইনফার্টিলিটি ( infertility ): কেন জীব তার প্রতিরূপ তৈরি করে রেখে যেতে পারে না? প্রতিরোধ ও করণীয় ।

  ইনফার্টিলিটি ( infertility ): কেন জীব তার প্রতিরূপ তৈরি করে রেখে যেতে পারে না? প্রতিরোধ ও করণীয় ।  সব প্রজাতিই তার বংশধর রেখে যেতে চায়। মানুষ যেমন সন্তানের জন্ম দেয়, তেমন অন্যান্য প্রজাতিও দেয়। তবে , অনেক সময় তারা সন্তান জন্মদিতে সক্ষম হয়না। কেন হয়না, কি কারণ , কি করা উচিত তা নিয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব। অর্থাৎ মানুষের ইনফার্টিলিটি নিয়ে বিস্তারিত থাকবে।  আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা সন্তান জন্মদিতে পারছেন না বা সক্ষম না। ইংরেজিতে একে বলা হয় , infertility বাংলায় বন্ধ্যাত্বতা। আমাদের মধ্যেও এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই আছেন। শুধু আমেরিকাতেই ১০ - ১৫ % ( ১৫-৪৪ বছরের)  দম্পত্বি বন্ধ্যা বা ইনফার্টাইল। বাংলাদেশে একেবারে সিরিয়াস ভাবে সেরকম কেস স্ট্যাডি না হলেও, অনেকগুলো রিসার্চ এ পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের বন্ধ্যাত্বতার রেট ৬% এর মত। পাশের দেশে ৭.৭% এর মত। সংখ্যাটা বিশাল। তো ইনফার্টিলিটি আসলে কি? “ যদি টানা এক বছর frequent, unprotected sex করার পরেও যদি কোন কাপল প্রেগনেন্ট না হন , তবে সেই কাপলটি ইনফার্টাইল”  ইনফার্টিলিটি হতে পারে দুইজনের একজনের কারণে...

Sea Navigation (তারা থেকে জি পি এস এর পথচলা)

  “If you want to learn to pray, go to sea.” —Portuguese proverb “...অথবা খুব বিশাল সমুদ্রের মাঝে, হারিয়ে যাওয়ার মত..." এভয়েড রাফার কষ্ট গানের এই লিরিক্স দিয়ে বোঝা যায়, কষ্ট আসলে সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার মত। 🙂 আপনার মনে কখনো প্রশ্ন জাগে না? যেখানে আমরা নিজেদের পাড়ার মধ্যেই হারিয়ে যাই, এই বিশাল সমুদ্র, মহাসমুদ্রে আমরা হারাই না কেন?  হারিয়েছিলাম একসময়। অনেক দক্ষ নাবিক, ক্রু, জাহাজ হারিয়েছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা এই সমস্যা সমাধানের পথ বের করে নিয়েছি। সেটা অবশ্যই এক দিনে হয়নি, কয়েক শতাব্দি লেগেছে! ন্যাভিগেশন ব্যতীত, আমরা খুব সম্ভবত  সমুদ্রের কাছে হারিয়ে যাব। ন্যাভিগেশন প্রাচীন প্রাথমিক সভ্যতার পক্ষে নতুন দ্বীপ আবিষ্কার করা, বাণিজ্য রুট স্থাপন এবং বিশ্বের অন্য পাশের লোকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়েছিল। ন্যাভিগেশন মৎস্যজীবীদের বিদেশের সমুদ্র বন্দরে নিরাপদে যাত্রা করার জন্য ও তাদের বাড়ি এবং বাণিজ্য জাহাজগুলি খুঁজে পাওয়ার সুবিধা দেয়। আজ, ন্যাভিগেশন অনেক নিখুত ও সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য ন্যাভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বজুড়ে জাহাজ, বিমান এবং ট্রাককে নির্দেশ দিয়ে বৈশ্বি...

পাভলভের পরীক্ষার সত্যঃ আসলেই কি ধর্ষনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা?

  “ Pavlov was a f***ing monster ! “  - Joe Scoot পাভলভের ১৪১ বছর পুরোনো একটা থিওরি আছে, যেটা দিয়ে  এখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্ষনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হিসেবে জানে। জানারই কথা, যেখানে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু সংবাদ পত্র ভুলকে সত্য বলে প্রকাশ করে, আমাদের পক্ষে আর তা কতটাই জানা সম্ভব? এই আর্টিকেলে আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব, আসলে পাভলভের তত্ব কি ছিল, আর তত্ব সম্পর্কে সত্যটাই বা কি?   পাভলভের তত্ব সম্পর্কে আমরা সাধারণ মানুষ কি মনে করি?  মানুষ ( বিশেষ করে বললে পুরুষ ) কুকুরের মানসিকতার।  মানুষের মধ্যে পশুত্ব আছে।  আমাদের মন ৩ টা সত্বা দ্বারা গঠিৎ! ( ইড, ইগো এবং সুপার ইগো )  ক্রমাগত রিপিটেশনের মাধ্যমে রিফ্লেক্স অর্জন করা যায়।    এবং, আপনার এসব ধারণা ভুল প্রমানিত হতে যাচ্ছে এই আর্টিকেলে।  কুকুরেরা মানুষের খুব ভালো বন্ধু, লয়াল । বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। এমনই কিছু কুকুর ইভান পাভলভ স্যারেকে সাহায্য করেছিল , মানুষের ব্রেন ও মনস্তাত্বিকতা নিয়ে জানতে। :) কুকুর পোষেন ? কুকুরেরা অনেক সুন্দর না? তো পাভলভ সাহেব একদিন করলেন কি, একদল...