৪.৪ আলোকবর্ষ দূরের আলফা সেন্টিরিউ থেকে শুরু করে ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের MACS J1149+2223 । এত দূরের দূরের গ্রহ সম্পর্কে আমরা কিভাবে জানি? তাদের ভর, প্রকৃতি আকার সম্পর্কে আমরা কিভাবে জানি? H-R Diagram দিয়ে | যার পূর্নরূপ Hertzsprung-Russell Diagram । কারণ তা আবিষ্কার করেছিলেন Ejnar Hertzsprung and Henry Norris Russell তবে আদি ধারণা ছিল গ্রিক দার্শনিক হিপোকাসের।jজিনিসটা মোটেও জটিল না, খুব সহজে বোঝানোর চেষ্টা করব।
অনেক অনেক দিন আগের এক রাত, গ্রিসের আকাশে অসংখ্য তারা দেখা যাচ্ছে। সেই আকাশের নিচে বসে তারা দেখছিলেন Hipparchus সাহেব। তিনি দেখলেন আকাশের তারাগুলো সব এক উজ্জ্বলতার নয়। কিছু তারা বেশি উজ্জ্বল, কিছু তারা কম। তাই তিনি মনে করলেন উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে এদের ভাগ করা যায় । সেটাই করলেন তিনি। উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে তারাগুলোকে ৬ টা ক্যাটাগরিতে ভাগ করলেন। ক্যাটাগরিকে ১ ,২ ,৩ এভাবে ৬ পর্যন্ত ধরা যায়। ক্যাটাগরি ১ ছিল সবচাইতে উজ্জ্বল তারা, ৬ ছিল তার দেখা সবচাইতে হালকা আলোর তারা ।
Hipparchus সময় লাইট পলিউশন ছিল না বললেই চলে। তবে, তখনকার দিনে এখনকার মত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। খালি চোখে অনেক তারাই দেখা সম্ভব না কারণ সেগুলোর উজ্জলতা অনেক কম। আমরা এখন আমাদের টেলিস্কোপ দিয়ে ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে আরো উজ্জ্বল ও কম উজ্জ্বল তারা দেখতে সক্ষম। যদি ৬ এর থেকে কম উজ্জ্বল হয়, সেটাকে আমরা ৭,৮ এমন ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারি। আবার ১ এর থেকে বেশি উজ্জ্বল তারাগুলোকে আমরা -১ ,-২ এভাবে নামকরণ করে থাকি।সেটা নিয়ে আসছি।
এইযে Hipparchus ৬ টা ভাগে ভাগ করলেন, তো এই ক্যাটাগরির মধ্যে পার্থক্য কতটুকু? আগে একটা জিনিস বলে নেই, Hipparchus সাহেব যে উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে একটা ক্যাটাগরি করলেন, একে বলা হয়, এপারেন্ট ম্যাগনিটিউড (apparent magnitude)। এই স্কেলে মোট ভাগ ৬ টা। সবচাইতে কম উজ্জ্বল ৬ নাম্বার ধাপ থেকে শুরু করে যদি মাত্র ৫ ঘর আগানো হয়, তারার উজ্জ্বলতা প্রায় ১০০ গুন বেশি হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১ নাম্বার ক্যাটাগরির তারা ৬ নাম্বারের থেকে ১০০ গুন বেশি উজ্জ্বল। কেন? সেটা এই আর্টিকেলের টপিক না, ব্যাঙাচিতে তারার ফিউশন নিয়ে আর্টিকেল যাবে, সেটাতে অবশ্যই থাকবে।
এখন এপারেন্ট ম্যাগনেটিউডের একটা সমস্যার কথা উল্লেখ করব। আলফা সেন্টিরিউ আমাদের থেকে ৪.৪ আলোকবর্ষ দূরে আছে। বিটা সেন্টিরিউ আছে ৩৯১.৪৩ আলোকর্ষ দূরে। কিন্তু পৃথিবী থেকে দুটোর আলো প্রায় সমান দেখা যায়। একটার এপারেন্ট ম্যাগনেটিউড বা এপারেন্ট ব্রাইটনেস (apparent magnitude or apparent brightness) ০.০১ আর আরেকটার ০.৬১ । দুটোই কাছাকাছি ধরনের উজ্জ্বল দেখায় পৃথিবী থেকে।(কাছাকাছি মানে ক্যাটাগরি এক আরকি) কিন্তু পৃথিবী থেকে দুইটার দূরত্ব তো সমান না। ব্যাপারটা কল্পনা করা যায়, আপনার চোখের সামনে একটা মোমবাতি আর ১০ ফিট দূরে একটা চার্জারের আলো আপনার কাছে দুটোর আলোই একই লাগবে মোটামুটি, কিন্তু আসলে তো একটা মোমবাতি আর চার্জারের আলো সমান না, চার্জার দূরে থাকায় আমাদের দেখতে কম উজ্জ্বল দেখায়, তার মানে শুধু উজ্জলতা পরিমাপ করলেই হচ্ছে না, আমাদের দূরত্বের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে।
এখন তারার দূরত্ব পৃথিবী থেকে কত এবং তা কিভাবে বের করে , তাও কিন্তু এই আর্টিকেলের টপিক নয়।খুব সম্ভবত ব্যাঙাচিতে যাবে প্যারালাক্স নিয়ে আর্টিকেল,সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। জিনিসটা খুব জটিল না, সিম্পল ত্রিকোনমিতি।
তো আমরা মাপতে পারি একটা পৃথিবী থেকে একটা তারার মধ্যবর্তী দূরত্ব। এই দূরত্ব ও এপারেন্ট ব্রাইটনেস এর সমন্বয়ে আমরা কোন তারার আসল আলো বা আসল উজ্জ্বলতা মাপতে পারি। একে বলে True magnitude or absolute magnitude। তাহলে এই যে কিছুক্ষন আগে আমি বললাম, আলফা সেন্টিরিউ ও বিটা সেন্টেরিউ এর এপারেন্ট ব্রাইটনেস ০.০১ ও ০.৬১ , এবার পৃথিবী থেকে তাদের দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে আমরা যদি তাদের absolute magnitude বা absolute brightness পরিমাপ করি তাহলে আমরা পাই ৪.৩৮ আর -৪.৫১ । মানে বোঝা গেল? আমরা আগেই বলেছিলাম, যে তারা যত বেশি উজ্জ্বল তাদের ম্যাগনেটিউড ততই কম। মানে সত্যিকারের উজ্জ্বলতা দেখলে বিটা সেন্টেরিউ এর উজ্জ্বলতা আলফা সেন্টিরিউ থেকে অনেক বেশি যদিও বা পৃথিবী থেকে দুটো দেখতেই প্রায় একই উজ্জ্বলতার মনে হয়।
এই প্রোসেসে কোন রকম সমস্যা ছাড়া আমরা ট্রু বা তারার আসলে উজ্জ্বলতার উপর ভিত্তি করে তারাদের শ্রেনিবিভাগ করতে পারব।
Photo 1: Alpha centauri( yellow - red) & beta centauri (slightly blue)
তো উজ্জ্বলতার বিষয়টা তো গেল, এখন আমরা আসি তারাদের রঙ নিয়ে।
1 নাম্বার চিত্রটা একটু খেয়াল করি, দুটো তারার রঙ এক? না। একটা হলদেটে লাল, আরেকটা প্রায় নীল। এইযে তারাদের এই রঙ, কি বোঝায়? কেন হয় এই রঙ? এটা আসলে তারাদের তাপমাত্রা বোঝায়। এই তাপমাত্রা কেন আসে সেটা তারার ভেতরকার ফিশনের জন্য, এটা আর্টিকেলে আসবে না তেমন। আপনারা ইউন্স ল নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিতে পারেন।
এইযে তারাদের রঙ, যেটা তাদের তাপমাত্রা প্রকাশ করে। আমরা জানি , তারার ভেতরকার তাপমাত্রা ৩ হাজার কেলভিন থেকে ৫০ হাজার কেলভিন পর্যন্ত হতে পারে। এটা অবশ্যই সার্ফেস টেম্পারেচার, নিউক্লিয়ার ফিশন নিয়ে পড়লে বুঝতে পারবেন, একটা তারার ভেতরে প্রায় মিলিয়ন কেলভিন টেম্পারেচার হতে পারে। যেমন আমাদের পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও ভেতরকার তাপমাত্রা অনেক বেশি।
এখন তাপমাত্রার বেসিসে আমরা কিভাবে স্টারকে ভাগ করি? যেসব তারার তাপমাত্রা কম হয়, তারা হয় লাল বা হলুদ আর যেসব তারার তাপমাত্রা বেশি হয়, তাদের রঙ হয় নীল। এই এক লাইনের ব্যাখ্যা দিতে তেমন কিছুই বোঝা যায় না। তারার তাপমাত্রা বের করার জন্য একটা সূত্র আছে। যেটাকে মনে যায় একটা বাক্য দিয়ে - একজন ভালো বালিকা হয়ে আমাকে চুম্বন করো! -_-
Oh Be A Fine Girl and Kiss Me
এখানে বোল্ড করা ৭ টা লেটার ৭ টা ক্লাস্টার উল্লেখ করে। নিচের চার্টে তাদের বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো।
চার্ট ১
প্রতিটি ভাগ আবার ১০ টা ভাগে বিভক্ত। এগুলোকে ০,১,২ এভাবে নামকরণ করা। সেজন্য দেখ, উদাহরণে ব্রাকেটে তাদের ভাগ দেখানো হয়েছে। ব্যাটালজিউস এম ২, রিগেল বি ৮ , আমাদের সূর্য জি ২ ।
এখন আপনি উপরের চার্টটা জানেন, এখন আপনাকে আমি প্রশ্ন করলাম, যদি ভেগার রঙ সাদা হয়, তাহলে আপনি ভেগা সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেন? কেন পারেন না? দেখুন, সাদা ভেগা এর তাপমাত্রা আর বর্নালি সম্পর্কে আপনি জানেন। আরো কিছু জানতে পারেন কি? হ্যা পারেন। আপনি তাদের আকার, ব্যাস, উজ্জ্বলতা সম্পর্কেও ধারণা নিতে পারেন। নিচে একটা চার্ট দিচ্ছি, কালেক্ট করা উইকি থেকে। ওটা দেখে নিলে বুঝবেন, কেন একটা তারার রঙ জানা আমাদের জন্য এত গুরত্বপূর্ন।
চার্ট ২
তো, তারার রঙ জানা গুরত্বপূর্ন বটে? তাই নয় কি?
রঙ এর বিষয়টা আমাদের আর্টিকেলের মূল টপিক ছিল না, পারিপার্শ্বিক কিছু জিনিস বোঝাতে এই টপিক নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হলো, এখন ফিরে আসি আমাদের মূল টপিকে। আমাদের হাতে এখন দুটো জিনিস আছে, একটা হলো তারাদের উজ্জ্বলতা বা ম্যাগনিটিউড আর তাদের রঙ বা টেম্পারেচার।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে এখন আমরা একটা ডায়াগ্রাম আকব। ডায়াগ্রামটা হবে নিচের চিত্রের মতো। একটা বক্সের মতো, বাম পাশে থাকবে ম্যাগনেটিউড মানে স্টারের উজ্জ্বলতা, আসল উজ্জ্বলতা, যা আমরা জানি, যত বেশি উজ্জ্বল হবে তারা, তার ম্যাগনেটিউডের মান ততই কম হবে।
ডানে আছে লুমিনোসিটি। টপিকটা তারা গঠনে ডিটেইলস পাবেন, আমি ছোট্ট ব্যাখ্যা দেই, এটা হচ্ছে তারার শক্তি নির্গমনের হার। এই নির্গমনকৃত শক্তির দ্বারাই কিন্তু তারার উজ্জ্বলতা নির্ভর হয়। বের করার একটা অস্থির সূত্র আছে। L=AT4 বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না, আর্টিকেলের শেষে লিংক দিয়ে দিব। জিনিসটা লগের মত, দেখা যাচ্ছে, ১ এর পর ১০, ১০০ এভাবে আবার ১ এর কম ০.১, ০.০১, ০.০০১ এভাবে ১০ এর লগারিদম।
চিত্র ২ঃ এইচ আর ডায়াগ্রাম (১/২)
উপরে আছে তাপমাত্রা নিচে আছে তারাদের সেই শ্রেনিবিভাগ। দুটোই রিলেটেড। এখন আমরা তারাদের এই ডায়াগ্রাম অনুসারে প্লট করব। মানে ফোটা ফোটা আকারে বসাব। বিভিন্ন ধরনের তারাকে।
বিভিন্ন ধরনের তারাকে বসানোর পর ডায়াগ্রামটা মোটামুটি নিচের চিত্রের মতো হবে।
চিত্র ৩ঃ এইচ আর ডায়াগ্রাম (২/২)
গ্রাফটা দেখে সবার প্রথমে তোমার মাথায় কি আসে? কোন লাইন দেখতে পাচ্ছো কি? হ্যা। মাঝে একটা লাইনের মত দেখা যাচ্ছে। ৯৫% এর মতো তারাই ঐ লাইনে রয়েছে, বেশ কিছু তারা ৫% এর মত, তারা ঐ লাইনের বাইরে। ঐ লাইনটা সেজন্য বলা হচ্ছে মেইন সিকুয়েন্স (Main Sequence ) । এবার লাইনের নিচের দিখে চোখ দেই, ওখানে দেখা যাচ্ছে ম্যাগনেটিউড কম, মানে উজ্জ্বলতা কম, লাল রং এর, ফলে আকার ও ছোট আর শক্তি নির্গমনের হার অনেক কম। ঐ লাইন ধরে আমরা যতই উপরে উঠব না কেন, তারার শক্তি নির্গমনের হার বাড়বে, উজ্জ্বলতা বাড়বে, রং নীলের দিকে যাবে, তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করবে।
অর্থাৎ, উপরের তারাগুলো বড়, মেইন সিকুয়েন্সের নিচের তারাগুলো ছোট, তারা যত বড় হবে, ফিউশন তত বেশি হবে ফলে জ্বালানি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। ফলে, তারার স্থায়ীত্ব কমে যাওয়ার কথা। এবং সেটাই হয়। উপরের তারাগুলো প্রায় ১০^৭ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে যেখানে নিচের তারাগুলোর লাইফস্প্যান মোটামুটি ১০^১১ বছর। অনেক বেশি। কারণ ছোট তারার ফিউশন রেট কম, জ্বালানি শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। আমাদের সূর্য যেহেতু জি ক্লাস্টারে অর্থাৎ মোটামুটি মাঝারি ও নিচের দিকে ও এর লুমিনিসিটি হচ্ছে ১।
এখন দেখা যাচ্ছে, মেইন সিকুয়েন্সের বাইরে কিছু তারা দেখা যাচ্ছে। চিত্রটার দিকে আরেকবার লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায়, কিছু তারা যাদের তাপমাত্রা অনেক কম, কিন্তু খুব উজ্জ্বল! এদেরকে বলা হয়, জায়ান্টস। এরা কিন্তু কম তাপমাত্রার তারা কিন্তু এদের আকার অনেক বড়। তাই এদের বলা হয় GAINTS অথবা SUPER GAINTS ।যেমন বেটেলজিউস (এম২)
এবার আরো কিছু তারা দেখা যাচ্ছে চিত্রের বামপাশের নিচের দিকে, যারা আসলে বেশ গরম বা উত্তপ্ত, তবে এদের উজ্জ্বলতা বেশি না। কেন বেশি না? কারণ এদের আকার ছোট। এদেরকে বলা হয় হোয়াইট ডোয়ার্ফ। White dwarf আসলে খুব ছোট তারা তবে বেশ গরম। তবে ছোট হওয়ায় এদের লুমিনিসিটি কম। যেমন সিরাস বি (Sirius B (A-5))
তো এটাই ছিল H-R Diagram । তারাদের সম্পর্কে জানার জন্য এই চার্টটির ভূমিকা অনেক বেশি। যদি আর্টিকেল নিয়ে কোন প্রশ্ন বা সাজেশন থাকে, অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। রেফারেন্স কমেন্টে।
রেফারেন্সঃ
উত্তরমুছুনরেফারেন্সঃ
https://rb.gy/tgxf1e
https://rb.gy/9blj9d
https://rb.gy/m6wlg8
বি.দ্রঃ ছবি দেখে বুঝতে হবে। সেজন্য আমার ব্লগে গিয়ে দেখতে পারেন
উত্তরমুছুনhttps://mahtabmahdi.blogspot.com/2020/11/h-r-diagram.html
অথবা গুগল ডক থেকে দেখে নিতে পারেনঃ https://rb.gy/1v9d8w